রোজার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা কিছু ও বিধি-বিধান


islam o jibon news
রোজার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা কিছু ও বিধি-বিধান
শরিয়তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট।

রোজা ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। এর পালনে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় বিধানগুলো জানা না থাকার কারণে সারাদিন উপোস থাকার পরও রোজা হয় না। প্রত্যেক রোজাদারের জন্য রোজার প্রয়োজনীয় মাসয়ালাগুলো জেনে নেয়া উচিত। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা তুলে ধরা হলো।

১. অপবিত্র অবস্থায় রোজার নিয়ত করা জায়েয, তবে ফজর হলে গোসল করে নিতে হবে। 
২. কোনো মহিলার যদি রমজানে ফজরের পূর্বে মাসিক ঋতু-স্রাব বা সন্তান প্রসবজনিত স্রাব হতে পবিত্র হয় তবে সে ফজরের পূর্বে গোসল না করলেও তার প্রতি রোজা রাখা ফরজ। তারপর ফজরে গোসল করে নিবে। 
৩. রোজা অবস্থায় দাঁত উঠানো, জখমে ঔষধ লাগানো চোখে বা কানে ঔষধের ফোটা নিক্ষেপ বৈধ, যদিও চোখে বা কানে ফোঁটা প্রয়োগের ফলে গলায় ওষুধের স্বাদ অনুভূত হয়। 
৪. রোজা অবস্থায় দিনের প্রথমভাগে ও শেষ ভাগে মিসওয়াক করা জায়েয বরং অন্যের মতো তার জন্যেও এ অবস্থায় সুন্নাত। 
৫. রোজাদার গরম ও পিপাসার তীব্রতা কমানোর জন্য পানি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কিছুর মাধ্যমে ঠাণ্ডা গ্রহণ করা বৈধ। 
৬. প্রেসার বা অন্য কোনো কারণে শ্বাস কষ্ট হলে রোজা অবস্থায় মুখে স্প্রে করা জায়েয। 
৭. রোজাদারের ঠোঁট শুকিয়ে গেলে পানি দ্বারা ভিজান এবং মুখ শুকিয়ে গেলে গড় গড়া করা ছাড়া কুলি করা বৈধ। 
৮. ফজরের সামান্য পূর্বে অর্থাৎ দেরি করে সেহেরি খাওয়া এবং সূর্যাস্তের পর তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নাত। রোজাদার ইফতারের জন্য খেজুর, শুকনা খেজুর, পানি, যে কোনো হালাল খাবার যথাক্রমে প্রথম থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। আর যদি ইফ্তারের জন্য কিছুই না পাওয়া যায়, তবে কোনো খাবার পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইফতারের নিয়ত করে নিবে। 
৯. রোজাদারের উচিত সৎকর্ম বেশি বেশি করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। 
১০. রোজাদারের ফরয কাজসমূহ নিয়মিত আঞ্জাম দেয়া এবং সকল হারাম থেকে দুরে থাকা একান্ত কর্তব্য; অতএব, পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মত এবং যদি সে জামায়াতে নামায আদায়ের ওযর বিহীন লোক হয় তবে জামায়াতের সাথে আদায় করবে এবং মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, ধোঁকাবাজি, সুদি লেনদেন করা ও সকল হারাম কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অনুরূপ আচরণ ও জাহেলিয়াত বর্জন না করে, তবে তার পানাহার বর্জনের আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই। (বুখারী)

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় : পবিত্র রমজান মাসের আমরা সঠিকভাবে রোজা পালন করতে চাই কিন্তু আমরা অনেকে জানি না রোজা পালনের সঠিক নিয়ম বা কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়। আসুন আমরা জেনে নেই কি করলে বা কোন কোন কাজে রোজা ভঙ্গ হয়-
১. সহবাস। কোনো ব্যক্তি যদি রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, তাহলে তার বীর্যপাত হোক আর নাই হোক; তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। 
২. সঙ্গম ব্যতিত অন্য পন্থায় বীর্যপাত। সহবাস ব্যতিত অন্যপন্থায় যদি কোনো রোজাদার যৌনস্বাদ নেয়ার জন্য স্পর্শকাতর কোনো যুবতী যৌবনা নারী সংস্পর্শে আসেÑ তাকে চুম্বন করে; জড়িয়ে ধরে অথবা হস্তমৈথুন করে ইত্যাদির মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটায় তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। 
৩. পানাহার বা নাক দিয়ে খাদ্য গ্রহণ। সেটা উপকারি হোক বা অপকারি হোক; হালাল হোক বা হারাম হোক; অল্প হোক বা বেশি হোক রোজা ভেঙে যাবে। 
৪. পানাহারের বিকল্প গ্রহণ। রোজাদার যদি পানাহারের বিকল্প উপায়ে খাবার গ্রহণ কওে যেমনÑ রক্ত গ্রহণ, শক্তিবর্ধক স্যালাইন গ্রহণ, এমন ইঞ্জেকশন যা আহারের কাজ করে অর্থাৎ গ্লুকোজ ইনজেকশন ইত্যাদি। 
৫. ইচ্ছাকৃত বমি করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে সে যেন পরবর্তীতে রোজা কাজা করে নেয়। (মুসলিম) 
৬. হায়েজ-নেফাস হলে। মহিলাদের হায়েজ (ঋতু) ও নেফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ) হওয়া, এমনকি যদি ইফতারের কিছু সময় পূর্বেও হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। 
৭. দূষিত রক্ত বের করা। দেহ থেকে দুষিত রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হবে কি হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে; তবে আসল কথা হলো দিনের বেলায় রোজা থাকা অবস্থায় এ কাজ না করাই উত্তম। 
৮. নিয়ত বাতিল করা। নিয়ত রোজার অন্যতম শর্ত। আর সারাদিন সে নিয়্যত নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনে জাগ্রত রাখতে হবে যে, আমি রোজাদার। কেউ যেন রোজা না রাখার বা রোজা বাতিল করার কোনো সংকল্প করে। কারণ রোজা না রাখার নিয়ত করলে অথবা তার নিয়ত বাতিল করলে সারাদিন পানাহার না করে উপবাস করলেও রোজা বাতিল গণ্য হবে। সুতরাং আমরা নিয়ত করব এবং নিয়ত রাখব। 
৯. মুরতাদ হওয়া। কোনো রোজাদার যদি তার কোনো কথা, কাজের কারণে মুরতাদ (কাফের) হয়ে যায় তবে ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে। অতপর সে যদি তাওবা করে পুনরায় মুসলিম হয়, তাহলে ঐ রোজা তাকে কাজা করতে হবে; যদিও সে ঐ দিন রোজা নষ্টকারী কোনো কাজ বা কোনো জিনিস ব্যবহার করে নি। 
১০. বেহুশ হওয়া। রোজাদার যদি ফজর থেকে নিয়ে মাগরিব পর্যন্ত বেহুশ থাকে, তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না এবং তাকে ঐ দিনের রোজা কাজা আদায় করতে হবে।

রোজার কাজা ও কাফফারা : শরিয়তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। তবে কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে। যেমন- ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খানা দেবে। ৩. অসুস্থতাজনিত কারণে কারো রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খানা খাওয়াতে হবে। গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।

Previous
Next Post »