বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরী ও মোবাইল ফোন কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হতে সুনির্দিষ্ট পরিমান টাকার পণ্য বা মাল ক্রয়ের শর্তে যে সকল বাড়তি অফার নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্রাহকদেরকে দিয়ে থাকে, এ সকল অফার যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিনিময় বিহীন মনে হয়, মূলতঃ তা বিনিময় ছাড়া নয়। কারণ, প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একই ইজাব তথা একই প্রস্তাবের মাধ্যমে তাদের বেশী অংকের মাল কম মূল্যে বিক্রি করে থাকে, যা ‘বাইয়ে অজইয়্যা’ তথা ঘাটতি দিয়ে বিক্রি করার অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন : আমরা মোবাইলে বিভিন্ন প্রকারের সীম ব্যবহার করে থাকি। যেমন- বাংলা লিংক,গ্রামীণ, এয়ারটেল ইত্যাদি। অনেক সময় কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদেরকে নির্ধারিত পরিমান টাকা রিচার্জের ভিত্তিতে বাড়তি অফার দিয়ে থাকে। যেমন- মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে, ৫০ টাকা রিচার্জ করলে ৫০ টাকা ফ্রি, অথবা ১০০ টাকা রিাচার্জ করলে ২৪ ঘণ্টা ২৫ পয়সা মিনিট। এত তারিখ হতে এত তারিখ পর্যন্ত ইত্যাদি।অনুরূপভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ হতে বিভিন্ন ধরণের অফার দেওয়া হয়। যেমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এটা দেয় যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান হতে যে কোনো গ্রাহক এক লক্ষ টাকার জিনিস ক্রয় করবে, দশ হাজার টাকার জিনিস ফ্রি দেওয়া হবে। ৫০,০০০ টাকার ক্রয় করলে, ৫,০০০ টাকার জিনিস ফ্রি দেওয়া হবে। উক্ত অফার এত মাস বা দিনের জন্য, অথবা এত তারিখ হতে এত তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকবে ইত্যাদি। লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দেয় ২০,০০০ টাকার কিতাব আমাদের লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করলে,৪,০০০ টাকার অমুক কিতাব তার সাথে ফ্রি। উক্ত অফার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দিয়ে থাকে।
এখন আমাদের জানার বিষয় হল, উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান হতে নির্ধারিত পরিমান টাকার জিনিসপত্র ক্রয় করার শর্তে যেহেতু উক্ত অফারসমূহ গ্রাহকদেরকে দিয়ে থাকে,তাই তা হেবা না হয়ে ফাসেদ লেন-দেনের অন্তর্ভুক্ত হবে কি? অথবা গ্রাহকগণ যেহেতু উক্ত অফারের কারণে বিনিময় ব্যতীত কিছু অংকের কিংবা মালের মালিক হয়ে যায়, তাই তা সুদী মুআমালার অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা? যদি উক্ত লেন-দেন বৈধ হয়, তাহলে ‘আক্বদে বাঈ’ তথা শরয়ী লেন-দেন, যেমন- বাইয়ে মতলক, বাইয়ে ছরফ, বাইয়ে সলম, ইজারা, হেবা ইত্যাদির কোন প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হবে? প্রমাণাদিসহ জানালে খুশি হব।
উত্তর : বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরী ও মোবাইল ফোন কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হতে সুনির্দিষ্ট পরিমান টাকার পণ্য বা মাল ক্রয়ের শর্তে যে সকল বাড়তি অফার নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্রাহকদেরকে দিয়ে থাকে, এ সকল অফার যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিনিময় বিহীন মনে হয়, মূলতঃ তা বিনিময় ছাড়া নয়। কারণ, প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একই ইজাব তথা একই প্রস্তাবের মাধ্যমে তাদের বেশী অংকের মাল কম মূল্যে বিক্রি করে থাকে, যা ‘বাইয়ে অজইয়্যা’ তথা ঘাটতি দিয়ে বিক্রি করার অন্তর্ভুক্ত। আর ‘বাইয়ে অজইয়্যা’ অর্থাৎ- বেশী মূল্যের মাল স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা শরীয়ত অনুমোদিত একটি লেনদেন। অতএব, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল ফোন কোম্পানি কর্তৃক সুনির্দিষ্ট রিচার্জের উপর বাড়তি অফারের বেচা-কেনাকে সুদী বা ফাসেদ লেন-দেন বলা যাবে না।
[ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়্যাহ- ৩/২, ৩, ৪, মাওসুয়া- ৯/১১, ফাতাওয়া শামিয়্যাহ- ৭/৭,বাদায়েউস সানায়ে- ৪/৩২০]
গ্রন্থনা ও সম্পদানা : মাওলানা মিরাজ রহমান
সৌজন্যে : মাসিক মুঈনুল ইসলাম
Sign up here with your email
ConversionConversion EmoticonEmoticon