নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টি করবেন যেভাবে

islam o jibon
নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টি করবেন যেভাবে
নামাজ বা নামাজে একাগ্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একাগ্রতা ছাড়া শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা প্রায় অসম্ভব। আর একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য প্রথমেই নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। যেমন- মুওয়াজ্জিন আজান দিলে তার জওয়াব দেয়া, আজান শেষে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া, অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর পরে দোয়া পড়া ইত্যাদি। অতঃপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুগন্ধিযুক্ত পোষাক পরিধান করে নামাজের জন্য বের হওয়া। এছাড়াও- ১. ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা। ২. নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তুমি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ যে ব্যক্তি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করবে, তার নামাজ যথার্থ সুন্দর হবে। আর তুমি সেই ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় করো, যে জীবনে শেষবারের মতো নামাজ আদায় করে নিচ্ছে’। ৩. নামাজে পঠিত আয়াত ও দোয়াসমূহ গভীরভাবে অনুধাবন করা। ৪. প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের পর ওয়াকফ করা। ৫. মধুর স্বরে স্থিরতার সাথে তেলাওয়াত করতে হবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াতকারী ঐ ব্যক্তি, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে যে, সে আল্লাহকে ভয় করছে’। [ ইবনে মাজাহ, হা/১৩৩৯ ] ৬. মনে করতে হবে- আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। কেননা, নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই মূলত মহান প্রতিপালকের কাছে বান্দার একান্ত প্রার্থনা। ৭. সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা। রাসুল (স.) নামাজের সময় মস্তক অবনত রাখতেন এবং দৃষ্টি রাখতেন মাটির দিকে। [বায়হাকি] আর তাশাহহুদের জন্য বসে শাহাদত আঙ্গুলের প্রতি দৃষ্টি রাখা। ৮. ভিন্ন ভিন্ন সুরা ও দোয়াসমূহ পাঠ করা। ৯. আয়াতে তেলাওয়াতের সিজদা থাকলে সিজদা করা। ১০. শয়তান হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া। কারণ শয়তান মানুষের চিরশত্রু। যার প্রধান কাজই হলো ইবাদতে বান্দার একাগ্রতা নষ্ট করা। ১১. নামাজের পরে বর্ণিত দোয়াসমূহ ও নফল নামাজগুলো আদায় করা। এবং ১২. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। কারণ বেশি পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত হৃদয়ে এক ধরনের প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি করে। যা নামাজে একাগ্রতার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
উপরিউক্ত আলোচনায় একাগ্রতা সৃষ্টির উপায়সমূহ স্পষ্ট করা হয়েছে। এবার একাগ্রতা সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কিছু বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। যথা- ১. নামাজের স্থান হতে একাগ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বস্থসমূহ দূর করা। এ কারণে রাসুল (স.) মসজিদকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার ব্যাপারে সাবধান করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪৪৮] ২. যাবতীয় ছগীরা ও কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। ৩. খাবারের চাহিদা নিয়ে নামাজ না পড়া। রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার উপস্থিত হয়; আর নামাজেরও সময় হয়ে যায়- তখন আগে খাদ্য গ্রহণ করো। খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাড়াহুড়া করো না’। [বুখারি, হা/৬৭১] ৪. প্রাকৃতিক কর্মের বেগ চেপে রেখে নামাজ না পড়া। কেননা পেশাব-পায়খানার বেগ থাকলে নামাজে একাগ্রতা আসে না। ৫. তন্দ্রাভাব নিয়ে নামাজ আদায় না করা। ৬. আলাপরত বা ঘুমন্ত ব্যক্তির পাশে নামাজ আদায় না করা। ৭. সিজদার জায়গা হতে ধূলা-বালি সরাতে ব্যস্ত না হওয়া। ৮. উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করে অন্যের ব্যাঘাত না ঘটানো। ৯. নামাজে আশেপাশে দৃষ্টিপাত না করা।
ফয়জুল আল আমীন
প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক
Previous
Next Post »